‘নিষিদ্ধ’ সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের ঘটনায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ফটক ও চেয়ারম্যান কার্যালয়ের তালা লাগিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে তালা দেন তাঁরা। এছাড়াও যদুবয়রা সাপ্তাহিক পশুহাটের টোল আদায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত ৮টার দিকে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটে স্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে কেক কাটা হয়। পরে কেক কাটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এর প্রতিবাদে ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা দেন।
এরপর রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে যদুবয়রা জয় বাংলা বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিল যদুবয়রা পশুহাটের টোলঘরে ভাঙচুর করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যায়। সেখানে পরিষদ থেকে সচিব, গ্রামপুলিশ ও সেবা প্রত্যাশীদের বের করে দেন এবং পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকের গেটে তালা লাগিয়ে দেন নেতা-কর্মীরা। এসময় যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ, ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনিছুর রহমান, সাবেক সদস্য আব্দুল মালেক, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি প্রান্ত ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামসহ শতাধিক নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের ভেতরে ও বাইরে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছেন। তাঁরা পরিষদের সচিব ও গ্রাম পুলিশদের বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগাচ্ছেন। তবে তালা লাগানো ছবি প্রতিবেদককে তুলতে দেননি তাঁরা। জয় বাংলা বাজার এলাকায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ।
এসময় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি প্রান্ত ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শনিবার রাতে পরিষদ এলাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে। তাঁদের এই অপরাধের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
পরিষদে তালা লাগানো ও হাটের টোল ফ্রি করার ঘটনা স্বীকার করেছেন যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর ও দেশদ্রোহীদের বিচারের না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের তালা খোলা হবে না। হাটে কেউ টোল তুলতে পারবে না। এতে কিছুদিন জনগণের হয়রানি হবে। তবুও দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই দেওয়া হবে না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিষদে সুনসান নীরবতা। ফিরে যাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
এসময় ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া গ্রামের গৃহিণী রেখা খাতুন বলেন, মেয়েকে ভর্তি করাব স্কুলে। সেজন্য জন্মনিবন্ধন করতে এসেছি। তবে পরিষদে তালা ঝুলছে, কেউ নেই। সেজন্য ফিরে যাচ্ছি। তাঁর ভাষ্য, সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। দ্রুত পরিষদ চালুর দাবি তাঁর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যদুবয়রা পশুহাট পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, প্রায় ৭৩ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য হাট ইজারা নেওয়া। আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত মেয়াদ আছে। তবুও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বৈধ হাটটি দখল করে নিয়েছেন। তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রেজাউল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কেক কাটাকে কেন্দ্র করে আজ রোববার দুপুরে শতাধিক লোকজন এসে পরিষদে তালা দিয়েছেন। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। তিনি বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েছেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ফোনে বলেন, গতকাল (শনিবার) ছুটির দিন হওয়ায় পরিষদ বন্ধ ছিল। যাওয়া হয়নি। কে বা কারা কেক কেটেছে তিনি কিছু জানেন না। সেজন্য পরিষদে তালা লাগানোটা অন্যায় ও বেআইনি।
কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, রাতে ছাত্রলীগের কেক কাটাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরে পরিষদ ভবনে তালা লাগানো ও পশুহাটের ইজারা ফ্রি ঘোষণা করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং দ্রুত পরিষদ চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ